শিশুরাই দিনবদলের কারিগর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
৩ অক্টোবর ২০১১, ১৮ আশ্বিন ১৪১৮
শিশুদের দিনবদলের কারিগর হিসেবে অভিহিত করে তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিশুদের ওপর পাঠ্যপুস্তক বোঝা যেন বোঝা হয়ে না দাঁড়ায়, সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রাজনৈতিক নির্যাতন ও সন্ত্রাসের শিকার যেন শিশুদের হতে না হয়, সে দিকেও দৃষ্টি দিতে বলেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী সোমবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার রক্ষা সপ্তাহ'র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। শিশু অধিকার সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য 'তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে জানবে শিশু জগৎটাকে'।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "প্রতিটি শিশুর জন্য গড়ে তুলতে চাই আলোকিত নিরাপদ স্বদেশ। আসুন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর আগামীর জন্য আমরা আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। আমরা সকলে স্ব স্ব অবস্থান থেকে শিশু অধিকার রক্ষা ও তাদের কল্যাণে কাজ করে যাবো।" দেশকে ভালোবেসে সুনাগরিক হয়ে গড়ে ওঠার জন্য শিশুদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গৃহে বা শিক্ষাঙ্গনে শিশুরা যাতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার না হয় সে জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সবাকেই আরো যতœবান হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "শিশু সব সময়ই বন্ধুর মতো আচরণ প্রত্যাশা করে। শিশুদের ওপর অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা চাপিয়ে তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।" শিশুর মানসিক বিকাশ ও জ্ঞানচর্চার জন্য প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "প্রত্যেক শিশুর জন্য তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের অবারিত সুযোগ থাকা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে তারা গভীরভাবে বিশ্বের অগ্রযাত্রাকে উপলব্ধি করতে পারবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান অšে¦ষণে আগ্রহী হবে। আগামী দিনের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য নিজেদের গড়ে তুলবে।"
"শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ, বিশ্বের ভবিষ্যৎ। তারাই বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আগামীতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। তারাই হবে দিন বদলের ভবিষ্যৎ কারিগর। তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে," বলেন তিনি। সব ধরনের শোষণ ও নির্যাতন থেকে শিশুদের নিরাপদ রাখতে বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আমরা শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ চাই। পারিবারিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শিশুর সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে চাই। আমরা চাই, বৈষম্যহীন শিশুবান্ধব পরিবেশ।"
শিশুদের বিকাশে পরিবারের দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই তার একটা নাম পাওয়ার অধিকার আছে। দেড় মাস থেকে টিকা পাওয়ার অধিকার আছে। ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পাওয়ার অধিকার আছে। পাঁচ বছর বয়সে স্কুলে যাওয়ার অধিকার আছে। শিশু অধিকারের বিষয়টি প্রত্যেককে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করার প্ররামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "তাদের না বলবেন না। তাদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করাবেন না । এতে তারা ভেতরে ভেতরে গুটিয়ে যাবে।"
শিশুর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠার জন্য শারীরিক ও মানসিক পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "আজ দু\খের সঙ্গে বলতে হয়, ডেভলপারদের বদৌলতে আজ খেলার মাঠগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে বিদ্যমান পার্ক ও খেলার মাঠ দখলমুক্ত করেছি। এগুলোকে শিশুদের ব্যবহার উপযোগী করা হচ্ছে।"
প্রধানমন্ত্রী শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আপনারা বছরে অন্তত একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণ করুন। সরকার আপনাদের পাশে থাকবে।" ভীতিকর ছবি বা সংবাদ প্রচার গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের বোঝা মনে না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তারা আমাদের পরিবার ও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের বোঝা ভাবলে চলবে না। তাদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।"
২০০১ সালে নির্বাচন পরবর্তী সহিংহতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, "অতীতে এদেশের অনেক শিশুকেই রাজনৈতিক নির্যাতন ও সন্ত্রাসের শিকার হতে হয়েছিলো। আমরা সেই অন্ধকার সময়ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।"শিশুদের কল্যাণে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম শুরু করার বিয়ষগুলো প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা, ধর্মগ্রন্থ থেকে তিলওয়াত- সব শিশুরাই করেছে। শিশুদের পক্ষ থেকে সারাহ মেহজাবিন ও আবিদুর রহমান দীপ নামে দুটি শিশু বক্তব্যও রাখে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীণ শারমিন চৌধুরী, ইউনিসেফের আবাসিক প্রতিনিধি ক্যারল ডি রয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব তারিক উল ইসলাম। বক্তৃতা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী দর্শক সারিতে বসে শিশুদের পরিবেশিত অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
No comments:
Post a Comment